বিদেশফেরত যাত্রীদের জন্য কোভিড-১৯ ‘নেগেটিভ’ সনদ আবার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ না আনতে পারলে ১৪দিন বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
রোববার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এক অনুষ্ঠানে জাহিদ মালেক বলেন, বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ আবার বাড়ছে, এর মধ্যেই বিদেশ থেকে মানুষ আসছে, অনেকে বাইরে যাচ্ছে। ভাইরাসের বিস্তার রোধেই করোনাভাইরাস পরীক্ষার সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
“আমাদের একটা নিয়ম করা আছে, তারা করোনাভাইরাস টেস্টের পর নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে আসতে হবে। তা না হলে ১৪দিন কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক। বিমানবন্দর, স্থলবন্দর বা সমুদ্রবন্দর- যে পথেই দেশে আসুক। সব জায়গায় এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সব জায়গায় কোয়ারেন্টিনেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
গতবছর ডিসেম্বরে চীনে যখন নতুন এ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিল, অন্য অনেক দেশের মত বাংলাদেশেও জানুয়ারি থেকেই বিমান ও স্থলবন্দরগুলোতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়। বিদেশফেরত যাত্রীদের তাপমাত্রা পরীক্ষাসহ স্ক্রিনিংয়ের পাশাপাশি কারও মধ্যে অসুস্থতার লক্ষণ থাকলে তাকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে পাঠানোর ব্যবস্থা হয়।
ঢাকার আশকোনা হজ ক্যাম্পে ও উত্তরার পাশের দিয়াবাড়িতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় কোয়ারেন্টিন সেন্টার পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় সেনাবাহিনীকে। বিদেশ ফেরতদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে সে সময় হাতে সিল লাগিয়ে দেওয়ারও ব্যবস্থা নেয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ।
মাঝখানে দুই মাসের বেশি সময় আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকলেও এখন আবার কয়েকটি দেশ থেকে আকাশ পথে যাত্রী পরিবহন হচ্ছে।
সে কারণে আবারও সব বন্দরে আবার কঠোর নজরদারি শুরুর নির্দেশনা সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক অনুষ্ঠানে দেন।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত ৮ মার্চ; ইতোমধ্যে তা ৪ লাখ ৩২ হাজার পেরিয়ে গেছে। এ ভাইরাসে এ পর্যন্ত ৬ হাজার ১৯৪ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এদিকে বিশ্বে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা সাড়ে ৫ কোটি ৩৯ লাখ ছাড়িয়ে গেছে; মৃতের সংখ্যা পৌঁছে গেছে ১৩ লাখ ১২ হাজারের কাছাকাছি।
দেশে লাইসেন্স ছাড়াই বিপুল সংখ্যক হাসপাতাল-ক্লিনিকে সেবা দেওয়ার বিষয়টি নিয়েও অনুষ্ঠানে কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, অনুমোদন ছাড়া কোনো হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ক্লিনিক কাজ করতে পারবে না। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সিভিল সার্জনসহ সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
“সব জেলায় তারা সব হাসপাতাল ও ক্লিনিক পরিদর্শন করবে। যাদের লাইসেন্স নাই, সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে। সেসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে, তাদের সময় দেওয়া হবে নবায়ন করার। যেখানে যন্ত্রপাতি নেই সেখানেও সময় দিয়ে যন্ত্রপাতি বসানোর জন্য সময় দেওয়া হবে।
“ওই সময়ের মধ্যে যন্ত্রপাতি বসাতে না পারলে হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে অনুমোদন এবং যথাযথ সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই দেশের ১১ হাজার ৯৪০টি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনেস্টিক সেন্টার চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
এর মধ্যে ২ হাজার ৯১৬টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক লাইসেন্সের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। ৯ হাজার ২৪টি হাসপাতাল-ক্লিনিকের মধ্যে কোনো কোনোটি লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে চিকিৎসা দেওয়া শুরু করলেও এখনও অনুমোদন পায়নি। আবার কোনো কোনোটির লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, সেই অর্থে সেগুলোও অবৈধ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের জানান, অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিকের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি হচ্ছে, তা শেষ হলে সবার সামনে প্রকাশ করা হবে।
“গত ১০দিন আগে সমস্ত জেলার সিভিল সার্জনদের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি বৈঠক হয়েছে। তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল হাসপাতালের তালিকা পাঠাতে। এর মধ্যে বেশিরভাগ জায়গা থেকে আমার তথ্য পেয়ে গেছি। কিছু তথ্য এখনও পাইনি। সবগুলো পেলে সাংবাদিকদের ডেকে আমরা দিয়ে দেব।”
করোনাভাইরাসের অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শিগগিরই শুরু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “বাজারে যেসব কিট চালু আছে সেগুলো জাস্টিফাই করার জন্য আমাদের কিছুটা সময় গেছে। এটা আমরা কেনার অনুমোদন পেয়ে গেছি। প্রক্রিয়াধীন আছে। এটা হয়তো অচিরেই কেনা হবে।”